ঢাকা

No edit

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাকাঃ

No edit

সংবাদ শিরোনাম ::
Header Ads

আসলেই স্বাধীন পশ্চিমা গণমাধ্যম?

প্রকাশঃ
অ+ অ-
জিহাদুল ইসলাম : স্বাধীন গণমাধ্যমের সূচকে বরাবরই বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এগিয়ে থাকে পশ্চিমা তথা ইউরোপ ও আমেরিকার গণমাধ্যম। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) -এর তথ্য অনুযায়ী এই সূচকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কিংবা বলকান অঞ্চলের দেশগুলো শীর্ষে থাকলেও কিছুটা পিছিয়ে পশ্চিমা বিশ্বেরই প্রভাবশালী দুই দেশ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

র‌্যাঙ্কিংয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ২৪ আর যুক্তরাষ্ট্র আছে ৪২ নাম্বারে। তবে তারাও কী কম স্বাধীনতা ভোগ করে? কয়েকটি ঘটনায় স্পষ্ট হয় তাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে নিয়ে রসিকতা করতে যেমন ছাড় দেয় না, সবসময় নির্মোহ সাংবাদিকতার চর্চাও দেখা যায় না তাদের মধ্যে।

সম্প্রতি বাজার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতার কারণে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন লিজ ট্রাস। মাত্র ৪৫ দিন ক্ষমতায় টিকতে পারেন তিনি। এত অল্প সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করায় ক্ষুণ্ন হয়েছে তার দলের ভাবমূর্তিও।

পদত্যাগের আগেই বোঝা গিয়েছিল বেশিদিন টিকছেন না লিজ ট্রাস। বিরোধী দল তো আছেই, তার পতনের ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছে খোদ দেশের একটি গণমাধ্যমও। লেটুস পাতার সঙ্গে ট্রাসের ক্ষমতার স্থায়িত্ব তুলনা দিয়েছিল ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি স্টার। লিজ ট্রাসের একটি ছবির পাশে একটি লেটুস পাতা রেখে এই তুলনা দেয় ট্যাবলয়েডটি। যার আবার লাইভও করা হয়। এর সাত দিনের মধ্যেই পতন হয় ট্রাসের।

একটি দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি ট্যাবলয়েডের এমন রসিকতা সত্যিই বুঝিয়ে দেয়, গণমাধ্যম সেখানে ভালোই স্বাধীনতা ভোগ করে। দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকেও ছাড় দিয়ে কথা বলে না তারা।

রসিকতা কম হয়নি ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন। তাকে নিয়ে খোলামেলা সমালোচনাই করত যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। দিনে ট্রাম্প ৫০০ বারেরও বেশি মিথ্যা বলেন বলেও প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল পত্রিকাটি। একটি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ব্যক্তিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশে পিছপা হয়নি তারা। ট্রাম্পও ওয়াশিংটন পোস্টের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতেন খোলাখুলি। ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক আবার অ্যামাজনের কর্ণধার জেফ বেজোস। যার সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকট। কিন্তু এই বেজোস কখনও ব্যক্তিগত কারণে ওয়াশিংটন পোস্টকে কাজে লাগাননি।

পশ্চিমা মিডিয়া তাদের শক্তিশালী রূপ দেখিয়েছিল সত্তরের দশকে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের পর চাপের মুখে ১৯৭৪ সালে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সেসময় দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার ক্ষমতায় বসা রিচার্ড নিক্সন। ১৯৭২ সালের মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনী প্রচারণার অফিস ছিল ‘ওয়াটারগেট হোটেল।’ ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল জানতে সেই হোটেলে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন কয়েকজন। তার সঙ্গে নাকি স্বয়ং প্রেসিডেন্ট নিক্সন জড়িত ছিলেন। যা বের করে আনেন ওয়াশিংটন পোস্টের দুই তরুণ সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টাইন ও বব উডওয়ার্ড। তারা একের পর এক প্রকাশ করেন নিক্সন প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহারের তথ্য। সেসময় হোয়াইট হাউজ থেকে তরুণ দুই সাংবাদিক ও ওয়াশিংটন পোস্টের ওপর চাপ আসতে থাকে। তবে পত্রিকাটির সম্পাদক বেঞ্জামিন ব্র্যাডলি সবসময় বব ও কার্লকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। সম্পাদক ব্রাডলিকে সমর্থন দিয়ে গেছেন ওয়াশিংটন পোস্টের তৎকালীন মালিক মিসেস ক্যাথরিন গ্রাহাম। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেছেন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে!

তবে পশ্চিমা মিডিয়া যে সবসময় স্বাধীন হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে এমনও নয়। সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিজ দেশের স্বার্থের পক্ষেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে এসব গণমাধ্যম। ইরাকে মার্কিন ও ব্রিটিশদের হামলায় পশ্চিমা গণমাধ্যম যেভাবে কাভার করেছে, সেটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।

সাদ্দামের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে— এমন অভিযোগ এনে ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা। পরে অবশ্য সেই অস্ত্রের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। হামলায় জাতিসংঘের অনুমোদন ছিল না। একপ্রকার গায়ের জোরেই হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তাতে পশ্চিমা গণমাধ্যমেরও একপ্রকার সমর্থন ছিল। গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারের কারণে যুদ্ধের আগে যেখানে পক্ষে পঞ্চাশ শতাংশের একটু বেশি সমর্থন ছিল, সেখানে যুদ্ধের পর সমর্থন দাঁড়ায় ৭২ শতাংশে।

২০০৭ সালে আল জাজিরায় ইরাকের তৎকালীন সুন্নি আরবের ভাইস প্রেসিডেন্টের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার পক্ষেই শুধু সংবাদ প্রচার করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। … ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, তারা প্রথম থেকেই জানত এটি মিথ্যা কিন্তু তারা এটাই (হামলা) চেয়েছিল। কারণ, তারা তাদের দেশের হাতিয়ার হিসেবেই কাজ করেছে, সত্য কিংবা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নয়।

ইরাকে কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি নিয়ে মার্কিন ও ব্রিটিশ মিডিয়া তখন তেমন সংবাদ প্রচার করেনি। তারা প্রচার করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অগ্রযাত্রা নিয়ে। ইরাকের সাধারণ জনগণের ওপর মানবতার যে লঙ্ঘন সেটি নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি পশ্চিমা গণমাধ্যমকে। বিবিসি, সিএনএসসহ অন্য অনেক পশ্চিমা গণমাধ্যম পরে অবশ্য একপাক্ষিক সংবাদ প্রকাশের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বলেও জানায় পশ্চিমা সাংবাদিকরা।

একটি মন্তব্য করুন