বেফাক মহাপরিচালকের কাছে আমার ১০ প্রস্তাবনা
প্রকাশঃ
মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ : কওমি আমাদের, আমরা কওমির। সুশোভিত এ কাননের আমরা গর্বিত ফুল। আমরা কওমিয়ান। যে আদর্শিক সুরক্ষিত দুর্গে আমাদের বেড়ে ওটা তার দৃষ্টান্ত বিরল! তবে বলাবাহুল্য যে, স্থান, কাল আর পাত্র ভেদের যে চাহিদা তার আলোকে কিছু সংস্কার অপরিহার্য হয়ে ধরা দেয়। সময়ের চাহিদার আলোকে কোরআনের আয়াতের বিধান যদি রহিত হতে পারে তবে এ আর তেমন কী? আমাদেরও উচিত প্রয়োজনীয়তার আলোকে নতুনভাবে সম্ভানাময় এই জগতকে ঢেলে সাজানো।
সম্প্রতি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এর সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বশীল (মহাপরিচালক) হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বেফাকের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও দীর্ঘ সময়ের মহাসচিব হযরত মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ.-এর সুযোগ্য সন্তান বিশিষ্ট লেখক, প্রথিতযশা আলেম মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী হাফি.। আগামী রবিউস সানীর ১ তারিখে অফিসিয়ালি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।
তার এই দায়িত্ব পাওয়াকে কেন্দ্র করে উম্মাহচিন্তক ওলামায়ে কেরাম অনেক আশাবাদী হয়েছেন। প্রায় সবাই বেফাক নিয়ে নবনির্বাচিত মহাপরিচালকের কাছে তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্খার কথা শেয়ার করছেন স্যোশাল মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায়। সেই আলোকে কওমির একজন সন্তান হিসেবে আমি আমার স্বপ্ন ও চিন্তাগুলো প্রস্তাবনা আকারে হুজুরের সমীপে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি-
প্রস্তাবনা-১
প্রতিটি নাগরিক তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্য রাষ্ট্রীয় গঠনমূলক বিষয়াদী জানা থাকা দরকার, যা পৌরনীতি শাস্ত্রে পড়ানো হয়। আমার জানা মতে বেফাকে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পাঠ্যবই নেই। তাই প্রয়োজনমত পৌরনীতি কওমি নেসাবভুক্তকরণ সময়ের অপরিহার্য দাবি।
প্রস্তাবনা-২
সমসাময়িক বিধি-বিধান প্রণয়নে ‘মাকাসেদে শরইয়্যাহ’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। কওমি নেসাবে এর অন্তর্ভুক্তিও জরুরি বলে মনে করি।
প্রস্তাবনা-৩
বেফাকের প্রাইমারি লেবেলের যে সাধারণ শিক্ষা আছে তা খুবই দুর্বল ও বাজার বিবেচনায় প্রকাশনাও নিতান্তই মানহীন। এ বিষয়ে গুরুত্ব প্রদানের আহবান জানাই।
প্রস্তাবনা-৪
প্রতিবছর যে পরিমাণ ছাত্র ফারেগ হচ্ছে, তাদের কর্মসংস্থানের উপযোগী সে পরিমাণ মসজিদ-মাদরাসা নেই বলে বিকল্প কর্মসংস্থানে সহায়ক হিসেবে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন হাতের কাজের প্রকল্প চালু করা। এককথায় কারিগরি শিক্ষা যাকে বলে, সেদিকেও গুরুত্ব দেয়া।
প্রস্তাবনা-৫
মহিলা মাদরাসা বেফাকের অন্যতম একটি প্রকল্প হলেও এ বিষয়ে বোর্ডকর্তৃক রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে প্রয়োজন অনুপাতে পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
প্রস্তাবনা-৬
দেশের সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শিক্ষিত হয়ে যারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইনজীবী পেশায় নিযুক্ত হয় তাদের অধিকাংশ ধর্মবিমুখ। অনাদর্শ চর্চায় তারা অভ্যস্ত, যে কারণে আমরা তাদের ধারস্থ হয়ে প্রায়ই প্রতারণার শিকার হই। এই অবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া। কোর্সভিত্তিক বা একাডেমিক সিস্টেমে এমন পদ্ধতি চালু করা যেন কওমি মাদরাসা থেকে পড়াশোনা করেও চাইলে যে কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আইনজীবী হতে পারে।
প্রস্তাবনা-৭
ক্যালিগ্রাফি, ওয়াল রাইটিং ও খোদাই করে যে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ আগে চালু ছিল, যা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, তার পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রস্তাবনা-৮
প্রতিষ্ঠানের নামে অনুমোদন বা রেজিষ্ট্রেশনের সময় ভুল সংশোধন করে দেওয়া। বানানগত হোক বা ব্যবহারগত। আরবি হোক বা বাংলায়।
প্রস্তাবনা-৯
দাওয়াহ’র কাজের প্রয়োজনে বিষয় সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি শুদ্ধ উচ্চারণের ক্লাস চালু করা।
প্রস্তাবনা-১০
দেশের বেসরকারি-সরকারি সকল উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পাশাপাশি বিদেশে উচ্চশিক্ষা সহজকরণে সিলেবাস সংস্কারসহ যাবতীয় কাঠিন্য দূর করে আগ্রহীদের বোর্ড থেকে অফিসিয়ালি সহযোগিতা করা।
মাঈনুদ্দীন ওয়াদুদ
সদস্য সচিব, কওমী পরিষদ বাংলাদেশ

Post a Comment