ঢাকা

No edit

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাকাঃ

No edit

সংবাদ শিরোনাম ::
Header Ads

হালাল সম্পদের প্রতিদান

প্রকাশঃ
অ+ অ-
সাবেত চৌধুরী 

প্রচ্ছদ : কাজী হাসানুল বান্না

একজন সৎ রাখাল এক ধনী ব্যক্তির মেষ চড়াতো। প্রতিদিন তাকে পাঁচ দিরহাম করে দেওয়া হতো পারিশ্রমিক হিসেবে। দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিলো মেষবালকের। একদিন মেষ মালিক দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছে করলো। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সে তার বকরিগুলো বিক্রি করে দিলো। রাখাল জানতে পেরে খুব দুঃখিত হলো। মালিক রাখালের কাজে বেশ সন্তুষ্ট ছিলো। তাকে অনেক পুরস্কৃত করতে চাইলো। কিন্তু রাখাল শুধু ঐ দিনের পারিশ্রমিক নিয়ে চলে গেলো। অতিরিক্ত কোনো পয়সা নিলো না। 

দিনমজুর মানুষ রাখাল, পরদিন থেকে কাজের সন্ধানে ঘুরপাক খেতে লাগলো। কোথাও কোনো কাজ পেলো না। পরিশেষে চিন্তা করলো, মালিকের দেওয়া একদিনের পারিশ্রমিক নিয়েই ব্যবসা শুরু করবো। একজন পাইকারী বিক্রেতার কাছে গেলো। রাখালের বিস্তারিত ঘটনা শুনে বিক্রেতা দুঃখিত হলো। কিন্তু পুঁজি অনেক অল্প। একটু বাড়াতে পারলে ভালো হতো‘আচ্ছা! যাও, কাল বা পরশু এসো।’ রাখাল নাছোড়বান্দা। কাল তো এ পুঁজিও থাকবে না—‘ভাই, তুমি যা পারো, তাই এনে দিও। আমি সন্তুষ্ট মনে তা গ্রহণ করবো।’ 

বাণিজ্যিক সফরে বেরুলো বিক্রেতা। সবার সব অর্ডারের পণ্য ক্রয় শেষে মনে পড়লো রাখাল বালকের কথা। পাঁচ দিরহামে কী-ই কিনবে? ভাবতে ভাবতে একটা গাছের ছায়ায় বসলো। খাঁচায় ভরে এক লোক একটি মোটা তাজা বিড়াল নিয়ে এলো। বললো, ‘ভাই! এ বিড়ালটা নেবে?’ মূল্য জিজ্ঞেস করা হলো। বললো, ‘পাঁচ দিরহাম।’ কোনো কিছু না ভেবেই রাখালের জন্য বিড়ালটি ক্রয় করে নিলো। এবার ফেরার পালা।

ফিরতি পথে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পথের ধারে একটি গ্রামে বিশ্রাম করার জন্য অবস্থান নিলো। গ্রামের লোকেরা বিস্ময়ে বিক্রেতার কাছে এলো। খাঁচায় মোটা বিড়ালটি দেখে বিক্রি করবে কিনা, জানতে চাইলো। বিক্রেতা বললো, ‘বিক্রি করবো। মূল্য কতো দেবে বলো?’ গ্রামের মুরুব্বি বললো, ‘মূল্য হবে বিড়ালের ওজন সমপরিমাণ স্বর্ণ।’ বিক্রেতার চোখ কপালে—‘একটি বিড়ালের মূল্য এতো! সত্যিই দেবেন? আমার সঙ্গে মজা করছেন না তো?’ মুরুব্বি বললেন, ‘না বেনিয়া ভাই! তোমার সঙ্গে কোনো মজা করছি না। আমি হলাম এ গ্রামের বিচারক। গ্রামের লোকেরা দীর্ঘদিন যাবৎ ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ। কোনোভাবেই ইঁদুর দূর করা সম্ভব হচ্ছিলো না। আবার গ্রামে কোনো বিড়ালও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’ বিক্রেতা খুশিমনে বিড়ালটি বেচে দিলো। 

বাণিজ্যিক সফর শেষে বাড়িতে ফিরে সবার প্রাপ্য সবাইকে বুঝিয়ে দিলো। কেউ পণ্য বুঝে নিচ্ছে তো কেউ নগদ অর্থ। আর রাখাল দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। সবার সব বুঝিয়ে দেওয়ার পর রাখালের পালা এলো। রাখালের হাতে একটি স্বর্ণবোঝাই থলে দিতেই রাখাল অবাক হলো—‘এতো স্বর্ণ? এগুলো কার? আমাকে কেনো দিচ্ছেন ভাই?’ বিক্রেতা বললো, ‘এগুলো তোমার পাঁচ দিরহামের বিনিময়।’ রাখাল বললো, ‘পাঁচ দিরহামের বিনিময়ে এতো স্বর্ণ? কীভাবে সম্ভব! এগুলো আমার না। আপনি আমার সঙ্গে ফাজলামো করবেন না দয়া করে।’ বিক্রেতা এবার সবিস্তারে ঘটনা খুলে বললো। রাখাল ঘটনা শুনে খুশিতে আত্মহারা। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বিক্রেতাকেও লভ্যাংশের কিছু দিলো। 

পুনশ্চ : ব্যবসায় প্রচুর বরকত। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-ও ব্যবসা করেছেন। হালাল উপার্জন এভাবেই বাড়ে। হালাল উপার্জন খেলে সবধরণের ইবাদত কবুল হয়। তাই আমরা হালাল খাবো, হারাম বর্জন করবো। হারাম, সুদ, ঘুষ যারা খায়, এমন খাবারের দ্বারা যে রক্ত-গোশত তৈরি হয়, তা জাহান্নামের আগুনে পুড়বে।

শিক্ষা : নিজ হাতে উপার্জিত কামাই হচ্ছে সর্বোত্তম। অন্যের কাছে চাইবো না। কারণ নিচের হাতের তুলনায় ওপরের হাত উত্তম। দানগ্রহীতার হাত থেকে দাতার হাত উত্তম।

লেখক : শিশু সাহিত্যিক ও গল্পকার
খিলগাঁও, ঢাকা

একটি মন্তব্য করুন