মুফতি সাহেব সমীপেষু
প্রকাশঃ
ইখতিয়ার হুসাইন ➤
সুন্নতের ফেরিঅলা মুফতি সাহেবরা কি আসলেই সুন্নত মেনে চলেন নাকি নিজেদেরই আত্মশুদ্ধির অভাব রয়েছে? আমার পড়ালেখার শুরু মালিবাগ জামিয়ায়, শেষ যাত্রাবাড়িতে। খণ্ডকালীন সময় রামপুরা ও বারিধারার অধীনে বসুন্ধরায়। জামিয়া থেকে সুন্নতের প্রচারকারী একজন মুফতি সাহেব সবসময় ছাত্রদের দুনিয়াবিমুখতার সবক দিতেন।
মোমেনশাহির চার সহোদর ভাই জামিয়ার কিতাব বিভাগের বিভিন্ন জামাতে পড়তেন। চার ভাইয়ের প্রত্যেকেই ছিলেন চোখে পড়ার মতো অসাধারণ সুন্দর। নিজ নিজ ক্লাসেও ছিলেন মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জনকারী। প্রত্যেকে ছিলেন সুসাহিত্যিক ও বিশুদ্ধভাষী। হাতের লেখাও ছিলো চমৎকার। মাদরাসার আরবি এবং বাংলা বক্তৃতার মজলিসও তারাই কাঁপাতেন। আমি তাদের থেকেই হাতের লেখা ও আরবি বক্তৃতা শিখেছি এবং সাহিত্যের প্রাথমিক প্রেরণা পেয়েছি।
বড়োভাই জামিয়ায় তাকমিলে বেফাক পরীক্ষা দিলেন। মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করলেন। দেওবন্দেও পড়ে এলেন। প্রসিদ্ধ এক মাদরাসায় হাদিসের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে খেদমত শুরু করলেন। একই বছর জামিয়ায় তাকমিল পড়লেন বাংলাদেশের একটি শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকের একমাত্র ছেলে। তিনিও তাকমিলে বেফাক পরীক্ষা দিলেন। কিন্তু ফেল করলেন। অতঃপর দাড়ি সুন্নত সীমার নিচে ছেঁটে ও টুপি ফেলে বাবার ব্যবসায় মন দিলেন।
নসিহত করা সেই মুফতি সাহেবের কাছে কেউ কেউ দুনিয়াবিমুখ ‘বড়োভাইয়ের’ বিয়ের জন্য হুজুরের বড়ো মেয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু হুজুর প্রত্যাখ্যান করে মেয়েকে বিয়ে দিলেন শিল্পপতির ফেল করা এবং সুন্নত সীমার বাইরে থাকা সেই ছেলের কাছে। আমরা ছোটো ছাত্র ছিলাম বটে, তবে কথা ও কাজের সাংঘর্ষিকরা মুফতি সাহেবকে আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো। তাই কখনও মন থেকে সম্মান করতে পারিনি।
এই মুফতি সাহেব সুন্নত তরিকার পীরও ছিলেন। মানুষকে সুন্নত ও দুনিয়াবিমুখতার সবকও দিতেন। জামিয়ার নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে সামান্য এক নম্বরও কম পেলে ছাত্রদের দাখেলা আটকে দিতেন। অথচ নিজের ছেলেদের সবাই বরাবর মকবুল-রাসিব হয়েও জামিয়ায় দাখেলা নিয়ে ইবতেদায়ি থেকে দাওরা পর্যন্ত পড়েছে।
জামিয়ার অনেক মাহের ও প্রবীণ উস্তাদদের ক্রমান্বয়ে তাড়িয়ে একচ্ছত্র প্রভাব ও দখলদারিত্বে জামিয়াকে কুক্ষিগত করেছিলো মুফতি সাহেব। কী থেকে কী হলো, হুজুরের সবগুলো মেয়ে ও ছেলে জড়িয়ে গেলো নানান অপরাধে। মেয়েগুলো একাধিক ছেলের সঙ্গে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বাও হলো। মুখে চুনকালি পড়লো। জামিয়া কুক্ষিগত করা মহাপ্রতাপশালী মুফতি সাহেবকে জামিয়া ছাড়তে হলো রাতের অন্ধকারে; তাও অতি গোপনে।
মুফতি সাহেব! মুফতি সাহেবের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। শেষ বয়সে রাতের অন্ধকারে অতি গোপনে আবার যেনো আপনাকেও পালাতে না হয়। যেই আসনে সমাসীন আছেন, সেই সম্মানটুকু অন্তত ধরে রাখুন।
লেখক : আলেম কবি, কথাশিল্পী, উপস্থাপক, আলোচক

Post a Comment