ঢাকা

No edit

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাকাঃ

No edit

সংবাদ শিরোনাম ::
Header Ads

অন্তু

প্রকাশঃ
অ+ অ-
তাজুল ইসলাম 

প্রচ্ছদ : কাজী হাসানুল বান্না

সেদিন যখন তোকে পেছন ফিরে তাকাতে বললাম, ফেলে আসা অতীতটায় ফিরতে বললাম, সবটা আবার শেষ থেকে শুরু করতে বললাম, তখন তুই তোর মতোই ব্যস্ত ছিলিস। আমায় শুধু একটা কথাই খুব করে বলে যাচ্ছিলিস, ‘যদি কোনো হেল্প লাগে, তাহলে কিন্তু বলিস আমায়।’ আর ফেরার ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেলি। 

উপায়ন্তর না পেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লাম তোর দিকে। ভাবলাম উত্তরে হয়তো তোকে ফিরে পাবো। তুই তাও দিব্যি এড়িয়ে গেলি। আমি বেশ নাছোড়বান্দা বনেই শুধু উত্তর চাই, উত্তর চাই করে তোর মাথা খাচ্ছি। টানা দুদিন বিরক্ত সহ্য করে সেদিন হম্বিতম্বি হয়ে বললি, ‘বেশ! উত্তর দেবো আমি! বলুন কি আপনার প্রশ্ন? অতঃপর আর কোনো ডিস্টার্ব নয়! ওকে?’

তখন দুপুরবেলা। নাওয়া-খাওয়া সব ছেড়েছুঁড়ে আগে তোর ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে বসলাম। আমার সেই একই প্রশ্ন, ‘আমার সবকিছু মিথ্যে আর অভিনয় হলেও সাতটা বছর ধরে স্রষ্টাকে বলা প্রতিটা শব্দই কি মিথ্যে? মিছেমিছিই কি তাঁর কাছে কেউ কাউকে চায়? চাইতে পারে? তাও আবার বছরের পর বছর?’ 

‘সবটাই মিথ্যে!’ স্ট্রেট বলে দিয়েছিলিস।

আমি শুধু তোকেই নয়, তাঁকেও ঠকাতে ছাড়িনি। বারবারই বললি আমার প্রার্থনার সবটা জুড়ে ছিলো স্বার্থ লুকিয়ে। আমি তোকে কিচ্ছু বলতে পারিনি তখন। শক্তি হয়নি বলার। 

পরদিন আবার অন্তু বলে ডাকলাম। বললাম, ‘শেষ কিছু কথা বলার ছিলো তোকে। ভয় পাসনে। এবার আর কোনো উত্তর চাইবো না তোর থেকে। সময় করে একটু পড়ে নিস সবটা৷ তাতেই হবে।’ 

রাত জেগে সবটা লিখলাম। 

ভেতরে জমা অনেক অব্যক্ত কথা। সব বললাম তোকে। দূরত্বটা একজনের নয়, বরং দুজনের দোষেই এসেছিলো সম্পর্কের মাঝে। সম্পর্কটা তো সবকিছুর ঊর্ধ্বেই ছিলো। তবুও কেনো তা হেরে গেলো? কেনোই বা বাড়লো দূরত্ব? সবটা বুঝিয়ে বললাম তোকে। 

হাজারভাবে বোঝালাম, তুই ফিরে আসবি বলে। সেদিনও কিন্তু সেই এক বোলই পেড়ে গেছি—‘আমাদের রাগ, কষ্ট, অভিমান আর ইগোর কাছে সম্পর্কটাকে হেরে যেতে দিস না, অন্তু!’ আমার কোনো কথাই শুনলি না তুই। শুনেছি ভালোবাসায় হাজারটা ভুল ক্ষমা করা যায়। ভুল শুনেছিলাম? 

ভেবেছিলাম, সম্পর্কের কথা ভেবে তুই ঠিকই ফিরে আসবি। আদি বলে ডাকবি আমায় আবার একটিবার। কিন্তু সেটি আর হলো কই! তুই পরিষ্কার জানিয়ে দিলি, দিব্যি ভালো আছিস। সুখেই আছিস। তোর নতুন জীবন বেশ গোছালো। পরিপাটি। 

তোর বন্ধুগুলোও খুব ভালো। আরও বলে দিলি, যার জন্য তুই এতো বেশি হ্যাপি, সে নাকি ভীষণ ভীষণ ভালো। শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললি—‘আল্লাহ আমাকে আর ঠকাবেন না। খুব ভালো রাখবেন। তুই দেখে নিস।’ 

অন্তু! জানিস, আমিও না বড্ডো নিশ্চিন্ত হলাম তোর কথা শুনে—দুজনের কেউ তো অন্তত সুখের দিশা পেয়েছে! কিন্তু তোর ঐ কথাটা? ‘হেল্প’—জানিস তো, বড্ডো বেশিই দরকার ছিলো আমার। তাইতো বারবার তোকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আগাগোড়া বললাম সবটা। তুই আমায় হেল্প করতে চাস। অথচ আমার চাওয়াটাই বুঝলি না। কি অদ্ভুত বল! অন্তু তোর ফিরে আসার থেকে বড়ো হেল্প দ্বিতীয়টি ছিলো না আমার জীবনে। 

ডিপ্রেশন আমায় কুঁড়েকুঁড়ে খেয়ে নিচ্ছে। জানিস, প্রচণ্ড ইরিটেশন হয়। থেকে থেকে মনে হয়, শেষ নিঃশ্বাসটা বুঝি বেরুবার জোগাড়। আজকাল নিজেকে ভীষণ পাগল পাগল মনে হয়। অন্তু! জানিস, বড্ডো অসহায় হয়েই তোর কাছে হেল্প চেয়েছিলাম। ফিরে আসার হেল্প। তুই বুঝতেই পারলি না। হয়তো বুঝেও গুটিয়ে নিলি নিজেকে। 

তুই ফিরে এলে হয়তো আর কিছুদিন আবার একসঙ্গে বাঁচা হতো। তুই ফিরে এলে হয়তো আবার বুকভরা নিঃশ্বাস নেওয়া যেতো। তুই ফিরে এলে সত্যি সত্যিই এক আকাশ হেসে বলতে পারতাম, ‘ভালো আছি!’ তোর হেল্পটা বড্ডো দরকার ছিলো রে অন্তু! ভালো থাকার জন্য দরকার ছিলো। বেঁচে থাকার জন্য দরকার ছিলো। এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য দরকার ছিলো। 

তুই শুধু হাসিটাই দেখলি, চোখের জলটা নয়। ভেতরের আমিটা তোর চোখেই পড়লো না৷ সম্পর্কটা তাহলে হেরেই গেলো বল! তুই হয়তো ফিরে আসবি। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আসবি। এসে হয়তো দেখবি, তোর চলে যাওয়াটা আমায় কেমন দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিলো। ভেতর থেকে শেষ করে দিয়েছিলো একেবারে। ফিরে এসে হয়তো দেখবি, ডায়েরির পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা—‘কারো নাম, তার হাসি, তার কথা-সুর, তার বলা-না বলা অনুভূতি, খামখেয়ালিপনা, তার অভিমান, অভিযোগ, তার ভুল, তার অবুঝ কান্না, তার স্পর্শ—এসবের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন মায়া যদি ভালোবাসা হয়, তবে আমিও ভালোবেসেছি। বরং আসক্তই হতে পেরেছি।’

ভালোবাসা বেখেয়ালে গুমরে মরে। 

আশ্চর্যের বিষয় কি, জানিস? পৃথিবী অবাক হয়ে শুনবে গল্পের অন্তুর কথা। আর আমি? আমি আমার জীবনের অন্তুকে নিয়ে হাসতে হাসতে পাড়ি জমাবো অচিনলোকে। নাহ, অন্তু নামের মেয়েটাকে নিয়ে নয়, শুধু অন্তু নামটা নিয়েই। আমার সমস্ত অনুভূতিজুড়ে রয়ে গেছে শুধু একটা নাম—তোর নাম; অন্তু। অন্তু৷ কেবলই অন্তু।

লেখক : গদ্যশিল্পী ও গল্পকার
কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ

একটি মন্তব্য করুন