ঢাকা

No edit

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাকাঃ

No edit

সংবাদ শিরোনাম ::
Header Ads

একটি গাছের গল্প

প্রকাশঃ
অ+ অ-
সাবেত চৌধুরী 

প্রচ্ছদ : কাজী হাসানুল বান্না

অনেক দিন আগের কথা। বিশাল একটি আপেলের গাছ ছিলো। একটি বাচ্চা দৈনিক সেই গাছের সঙ্গে খেলা করতো। কখনও দোলনা বানিয়ে হাওয়ায় ভাসতো; কখনও গাছের ফল খেতো। আবার ক্লান্ত হলে গাছের ছায়ায় প্রশান্তির ঘুম দিতো। এতে গাছও আনন্দিত হতো। বাচ্চাও খুশি হতো। সময়ের পালাবদলে বাচ্চাটি বড়ো হতে লাগলো। এখন দৈনিকের মতো গাছের সঙ্গে খেলা করে না। 

একদিন বালকটি অভিমান নিয়ে এলো। গাছটি খুশিতে আত্মহারা। বললো, ‘এসো, আমার সঙ্গে খেলা করো।’ বালকটি বললো, ‘আমি বড়ো হয়েছি, আমার কিছু খেলনা কেনা দরকার।’ গাছটি ভাবনায় পড়ে গেলো, কীভাবে বালকটির উপকার করা যায়! গাছ বললো, ‘আমার কাছে ফল আছে, সেগুলো তুমি বাজারে বিক্রি করো; তাহলেই তোমার খেলনা কিনতে পারবে।’ বালকটি আনন্দিত হয়ে গাছের ফল নিয়ে চলে গেলো।

গাছের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। বালকটি গেলো আর এলো না। গাছের দুঃখের ইতি নেই।

এই তো ছেলেটি এসেছে, গাছের আনন্দ ও সৌভাগ্যের শেষ নেই। বালকটি এখন যুবক। এসো, এসো, আমার সঙ্গে খেলা করো। যুবক উত্তর দিলো, ‘এখন খেলার সময় নেই, আমার কাঁধে অনেক দায়িত্ব। স্ত্রীর ভরণপোষণ ও সন্তান-সন্তুতিদের জন্য একটা আশ্রয় দরকার। একটা ঘর দরকার। তুমি কি আমাকে সহযোগিতা করতে পারবে?’ গাছ বললো, ‘হায় আফসোস! সেজন্য তো টাকা দরকার। আমার কাছে তো টাকা নেই। একটা কাজ করো, যে ডাল ধরে দোলনা খেতে, সেগুলো কেটে নিয়ে যাও। বাজারে বিক্রি করে তোমাদের জন্য ঘর বানাও।’ যুবকটি যারপর-না-ই খুশি হলো। আনন্দে আটখানা হয়ে এই যে গেলো আর এলো না। 

আহ, গাছ একেবারে একা; দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ভাবেকেউ নেই, কোথাও কেউ নেই। 

গরমকালে যুবকটি এলো, গাছটি সীমাহীন খুশি হলো। বললো, ‘এসো, এসো, আমার সঙ্গে খেলা করো।’ লোকটি বললো, ‘আমি অনেক বুড়িয়ে গেছি, বিশ্রামের প্রয়োজন। কোথাও যেতে আমার অনেক কষ্ট হয়। আমাকে কি যাতায়াতের জন্য কোনো বাহন দেওয়া যায়?’ গাছটি বললো, ‘হায় আফসোস! আমার কাছে ফলও নেই, ডালও নেই। একটা কাজ করো, তুমি আমার থেকেই কিছু অংশ কেটে নাও।’ বৃদ্ধটি খুশি হয়ে গেলো। এই যে গেলো, আর এলো না। গাছটি দুঃখ নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকলো। হায় আফসোস! মানুষ এমনও অকৃতজ্ঞ হয়? গাছটিও শুকিয়ে গেছে। অপেক্ষার পালা তবুও শেষ হয় না। 

বহুদিন পর বৃদ্ধ এলো। গাছটি দুঃখ নিয়ে বললো, ‘ফল নিলে, ডাল নিলে, আমার কিছু অংশও কেটে নিলে; কিন্তু কোনো কিছুতেই আমার কাছে রাখতে পারলাম না তোমায়।’ বৃদ্ধ বললো, ‘আমার দাঁত নেই যে, ফল খাবো; শক্তিও নেই যে, ডালে চড়বো। হে গাছ, তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই আমার কাছে নেই।’ চোখজুড়ে অশ্রু বইছে। দু'ফোটা তপ্তাশ্রু গাল বেয়ে পড়ে গেলো। গাছ বললো, ‘এসো, আমার কাছে মৃত শিকড় আছে, এখানে বসে আরাম করো। এটাই বিশ্রামের উপযুক্ত জায়গা।’ বৃদ্ধ গাছের শিকড়ে বসলো। গাছটিও কেঁদে দিলো। বলতেই থাকলো, ‘চিরসুখের নিবাসে এসো। বিশ্রাম করো। অনেক কষ্ট করেছো। এবার একটু আরাম করো।’ 

পুনশ্চ : গাছটি হলো মা। সন্তানদের কোনো বিনিময় ছাড়া ভালোবাসেন। নিজের সর্বস্ব বিলীন করেন সন্তানের সুখের জন্য। পরিশেষেও ভাবেন সন্তানের জন্য। তাই মায়ের কবরে গিয়ে কাঁদার পূর্বে মায়ের জন্য কাঁদুন। ভাবুন। 

শিক্ষা : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তার নাক ধূলিধূসরিত হোক; অতঃপর তার নাক ধূলিধূসরিত হোক; অতঃপর তার নাক ধূলিধূসরিত হোক; যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেলো; একজনকে অথবা দুজনকেই। অতঃপর সে (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে যেতে পারলো না।’ (মুসলিম : ২৫৫১, মুসনাদে আহমদ : ৮৩৫২)।

এক লোক এসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আমার থেকে সদাচরণ পাওয়ার সর্বাধিক অধিকার কার?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘তোমার মা।’ সে আবারও একই প্রশ্ন করলো। তিনি দ্বিতীয়বারও উত্তরে বললেন, ‘তোমার মা।’ সে আবারও একই প্রশ্ন করলো। তিনি তৃতীয়বারও উত্তরে বললেন, ‘তোমার মা।’ সে আবারও একই প্রশ্ন করলো। তিনি চতুর্থবারে বললেন, ‘তোমার পিতা।’ (বোখারি : ৫৯৭১)। 

লেখক : শিশু সাহিত্যিক ও গল্পকার
খিলগাঁও, ঢাকা

একটি মন্তব্য করুন